বিশ্ববিদ্যালয় নামটি শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে অপার সম্ভাবনার দুনিয়া । যেখানে ছাত্রছাত্রীরা হাজারো স্বপ্ন নিয়ে পড়তে আসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে । চেষ্টা করে নিজের স্বপ্নকে খুঁজে পাওয়ার । আকাশের বিশলতা যেমন বলে শেষ করা যাবে না ঠিক তেমনি তাদের নিজেকে বিকশিত করার যে প্রবল আকাঙ্ক্ষা তা হয়তো বিশ্ববিদ্যালয় পূরণ করতে পারবে এমন ধারণা নিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণ করে । কিন্তু সময় যতই গড়িয়ে যায় তাদের স্বপ্নগুলো আস্তে আস্তে কাঁচের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে । হয়তো তাদের আর্তনাতের শব্দ শুনতে পারে না কেউ । কোন পড়ন্ত বিকেলে অথবা ঘুম না আসা রাতে শত শত ছাত্র ছাত্রী হয়তো মেনে নেয় এই করুন বাস্তবতা । তারা হয়তো মেনে নেয় বাংলাদেশে এটাই নিয়ম । এখানে স্বপ্ন শুধুমাত্র স্বপ্ন থেকেই যায় এর বাস্তবায়ন হয়তো সম্ভব না । কিছু পরিসংখ্যান দিলে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের বেকারত্বের যে করুন চিত্র ভেসে উঠবে তা যে কাউকে আতঙ্কে ফেলে দিতে পারে ।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিস এর দুটি জরিপ অনুযায়ী দেশের স্নাতক ডিগ্রিধারীদের ৩৭ থেকে ৬৬ শতাংশ বেকার । একশন এইড (2019) সালের গবেষণা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাজুয়েটের ৪৬ শতাংশের থেকে বেশি বেকার । বিশ্ব ব্যাংক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপর জরিপ করেছিল তাতেও দেখা গেছে স্নাতক পাস করা শিক্ষার্থীদের ৪৬ শতাংশ বেকার । ব্রিটিশ সাময়িক ইকোনোমিস্টের ইকোনমিক্স ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশই স্নাতক বেকার । যেখানে ভারতের ৩৩ শতাংশ ,পাকিস্তানে ২৮ শতাংশ, নেপালে বিশ্ব শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৭.৮% বেকার । আমরা যদি এসব তথ্য পর্যালোচনা করি তাহলে দেখা যায় যে, প্রতি বছর কর্ম ক্ষেত্রে প্রবেশ করা ২০ থেকে ২২ লক্ষ মানুষের অর্ধেক বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট জব পাচ্ছে না । করোনা মহামারীর কারণে উচ্চ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা আরো বেড়ে গেছে ।
১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল মাত্র দশটা। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা 158 টা । এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় 53 টা এবং ১০৫ টা হচ্ছে প্রাইভেট । প্রতি বছর প্রায় ৮ লক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েট বা স্নাতক ডিগ্রী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে কিন্তু সেই তুলনায় জব বাড়েনি ।
তাহলে প্রশ্ন জাগতে পারে এত বিশ্ববিদ্যালয় কেন ? তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কি বেকার তৈরি করা ? আচ্ছা এদের নিয়ে কি কারো কোন ভাবনা আছে ?
প্রতিটি পরিবার তাদের সন্তানকে ছোটবেলা থেকে কত কষ্ট নিয়ে মানুষ করে । তারা তাদের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে ছেলেটি যেন বড় হয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে । তবে দিনশেষে যদি যখন এ ধরনের চিত্র ভেসে ওঠে তখন তাদের অসহায় আত্মসমর্পণ করা ছাড়া কোনো কারণ থাকে না । জীবনের শেষ বেলাও এসে পিতা-মাতাকে সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তে থাকতে হয় । এরপরে পরিবারের লেগে থাকে অশান্তি । শুধুমাত্র যে পরিবারে অশান্তি লেগে থাকে বিষয়টি এমন না , ছাত্রছাত্রীরা মানসিকভাবে অনেক ভেঙ্গে পড়ে ।
Picture : collected
আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত 980 জন বেকার গ্রাজুয়েটের উপর এক গবেষণায় দেখা গেছে শতকরা 81 ভাগ জব প্রত্যাশী ডিপ্রেশনে ভুগছেন । প্রথম আলোর ২০১৯ সালে তারুণ্য জরিপ অনুযায়ী দেশের ৭৭.৬ শতাংশ তরুণী কর্মসংস্থানে নিয়ে উদ্বিগ্ন । এছাড়াও জরিপে অংশ নেয়া উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিদের প্রায় 91 শতাংশ ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগে । দেশে প্রতিযোগিতা , সামাজিক অস্থিরতা , ভবিষ্যৎ কর্ম জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তা তরুণ তরুণীদের ভিতরে পরোক্ষভাবে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে ।
মূল ধারার পত্রিকায় প্রকাশিত পুলিশের তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মানুষের আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে যাদের বেশিরভাগ এর বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ।
আমাদের এখনো কি বিশ্ববিদ্যালয় কারিকুলাম নিয়ে ভাবার সময় আসেনি ? সময় ও প্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে যথোপযুক্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা এখন ছাত্র-ছাত্রীদের প্রধান আবদার । দেশে যেন গ্রাজুয়েশন করে আর বেকার থাকতে না হয় সে জন্য যথোপযুক্ত কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে সরকারকে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে । তা না হলে আবারও ভেসে উঠবে হতাশা এবং আত্মহত্যার গল্প ।
0 Comments