ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়, জীবনের প্রতিটি কাজে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে, যা মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে। আল্লাহর বাণী এবং রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবন আমাদের সামনে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়। আজকের সমাজে আমরা যেন ভুলে গিয়েছি এই পবিত্র শিক্ষা।
আমরা যখন নিজেরা ভুল কাজ করি, তা এক ধরনের পাপ। কিন্তু সেই পাপকে সমাজে প্রচার বা উৎসাহিত করা আরও বড় পাপ, কারণ এর প্রভাব অনেক গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী।
হারামের মোহে অন্ধ সমাজ
সমাজের প্রতিটি কোণ আজ যেন হারামের ছোঁয়ায় দূষিত। তরুণ প্রজন্ম হারাম কাজকে শুধুই গ্রহণ করছে না, বরং সেটিকে এমনভাবে প্রচার করছে যেন তা প্রশংসনীয় কিছু।
১. অশ্লীলতার বন্যা
মনে করুন, একসময় মানুষের লজ্জা ছিলো গহনা, আর আজ সেই লজ্জা যেন হারিয়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ার ফিল্টারে। দম্পতিরা নিজেদের ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলোকে জনসমক্ষে তুলে ধরে। কেউ ভাবছে না যে, এই কাজগুলো শুধু তাদের ব্যক্তিগত গুনাহই নয়, সমাজেও অশ্লীলতার আগুন ছড়াচ্ছে।
২. অবৈধ সম্পর্কের গৌরব
আজ প্রেমকে এমন এক ‘সাধারণ’ জিনিস হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে, যেন বিয়ের আগে সম্পর্কই আধুনিকতার মাপকাঠি। সিনেমা, সিরিজ, গান—সবকিছুতেই এই হারাম সম্পর্ককে গৌরবান্বিত করা হচ্ছে। এ যেন এক সোনার খাঁচা, যা ভেতরে বিষের মতো।
৩. হারাম আয়ের পথে দৌড়
শর্টকাটে সফল হওয়ার মিথ্যে স্বপ্নে আজ আমরা হারামের পথ বেছে নিচ্ছি। কেউ সুদের মাধ্যমে আয় করছে, কেউ অশ্লীল পণ্য প্রচার করছে। আমরা ভুলে যাচ্ছি, এই আয় দুনিয়ায় সাময়িক আরাম আনলেও আখিরাতে তা ধ্বংস ডেকে আনবে।সমাজকেই ভুল পথে চালিত করছে।
সমাজে হারামের প্রভাব ও শাস্তি
আমাদের এই হারামের পথ কেবল নিজেদেরই ক্ষতি করছে না, পুরো সমাজকে গভীর অন্ধকারে নিয়ে যাচ্ছে।
১. নৈতিকতার মৃত্যু
একসময় যেখানে লজ্জা, সম্মান, এবং সততা ছিলো সমাজের মূল স্তম্ভ, আজ সেখানে কেবল ভাঙনের সুর। অশ্লীলতা এবং অবৈধ সম্পর্কের বিস্তার আমাদের তরুণ প্রজন্মের নৈতিকতা ধ্বংস করছে।
২. শান্তির অভাব
হারাম থেকে প্রাপ্ত অর্থ হয়তো সাময়িক আরাম দিচ্ছে, কিন্তু সেই আরামে শান্তি নেই। সুদভিত্তিক অর্থনীতি যেমন দরিদ্রদের শোষণ করছে, তেমনি হারাম আয়ে পরিবারগুলোয় সুখের বদলে কলহ নিয়ে আসছে।
৩. আল্লাহর শাস্তি
আল্লাহ বলেছেন:
“যারা মন্দ কাজকে প্রচার করে, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।” (সূরা নূর: ১৯)
হারাম কাজ নিজে করা যেমন পাপ, তেমনই সেটি সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া আরও বড় পাপ। আল্লাহর বিচার থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না।
-------------------------------
দুনিয়ার জীবনের বাহ্যিক চাকচিক্য খুবই ক্ষণস্থায়ী। যারা হারামের মাধ্যমে সুখ খোঁজে, তারা আসলে মরীচিকা তাড়া করে।
একটি কোরআন আয়াত মনে রাখুন:
দুনিয়ার জীবন হলো একটি খেলা ও বিনোদন মাত্র, কিন্তু আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন।
যারা এই ক্ষণস্থায়ী জীবনকে প্রাধান্য দেয়, তারা আখিরাতের অমূল্য পুরস্কার হারায়। এই কথাটি বোঝানোর জন্য একটি উদাহরণ:
- একটি শিশু যদি চকচকে খেলনা দেখে নিজের সোনা বিক্রি করে দেয়, তবে সে কী বুদ্ধিমান হবে?
ঠিক তেমনি, যারা দুনিয়ার মিথ্যে সুখের জন্য আখিরাতের শান্তি ত্যাগ করে, তারা বড় ক্ষতিগ্রস্ত।
দৃষ্টান্ত স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা
আমাদের কাজের মাধ্যমে আমরা সমাজের জন্য ভালো উদাহরণ স্থাপন করতে পারি।
- ইসলামের আদর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন করুন।
- হারাম থেকে দূরে থাকুন এবং হালাল রোজগার করুন।
- নিজের আচরণ, পোশাক এবং কথা দ্বারা ইসলামের সৌন্দর্য প্রদর্শন করুন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
সেরা মানুষ সে, যে অন্য মানুষের জন্য কল্যাণকর।
-------------------------------------------------------------
আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন সঠিক পথে চলার এবং অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য। আমরা যেন ভুলে না যাই:
"পাপ করা এক জিনিস, কিন্তু পাপের প্রচার করা আরও বড় পাপ।
আজ যদি আমরা বুঝতে পারি যে হারাম কাজ শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং এটি উম্মাহর ভবিষ্যতকে নষ্ট করে, তবে আমরা এই ভুলগুলো থেকে বিরত থাকতে পারব।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হারাম থেকে বাঁচার এবং সৎ কাজের দৃষ্টান্ত স্থাপনের তৌফিক দান করুন।
“তোমার কাজই হোক আলো, যা অন্যকে অন্ধকার থেকে মুক্তি দেবে।

0 Comments