REPORTING FACTS , NOT FICTION

6/recent/ticker-posts

সমাজ ও রাষ্ট্রের চোখে যারা নির্বোধ


 

জীবনের 24টি  বসন্ত কেটে গেল প্রতিনিয়ত জীবনকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করছি   জীবনকে নতুন ভাবে বোঝার চেষ্টা করছি   সমাজ রাষ্ট্রের কাঠামো বোঝার চেষ্টা করছি   মানুষ কিভাবে চিন্তা করে তা বোঝার  চেষ্টা চলছেই আমার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরে   বাবা যেহেতু নেভিতে  চাকরি করে সেই সুবাদে ছোটবেলা থেকে চট্টগ্রামে থাকা   তাই মোটামুটি  শহরের মানুষের মানসিকতা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা রাখি   বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে ঢাকায় থাকা হয়  

 অনেকে হয়তো ভাবছেন , আমি আমার ব্যক্তিগত কথা কেন বলছি ব্যক্তিগত  কথা এজন্যই বলছি জানি আমার   কথার গভীরতা বুঝতে সুবিধা হয়    শহরের মানুষ সাধারণত দুনিয়ামুখী বেশি হয়ে থাকে   এটার জন্য তারা ব্যক্তিগতভাবে যতটা না   দায়ী, তার থেকে বেশি পরিবেশ তাদেরকে দুনিয়ামুখী করে তোলে   ঢাকা শহরের কথা চিন্তা করুন   যেখানে যাবেন বড় বড় ব্যানার   চাকচিক্যে ভরা রেস্টুরেন্ট ,  সিনেমা হল ,  ক্লাব ,  রিসোর্ট  আরো কত কি    এরকম  চাকচিক্য এবং আভিজাত্য থেকে  খুব অল্প যুবক-যুবতী পারে নিজেকে দূরে রাখতে   এখন ঢাকা শহরের সাথে সমান তালে পাল্লা দিয়ে অন্যান্য বিভাগে গড়ে উঠেছে এই সংস্কৃতি   আরো আশ্চর্যের বিষয় কি জানেন -  আমি এক সহকারি সচিব ছেলেকে পড়াই ,  ইংলিশ ভার্সনে মাত্র ক্লাস ওয়ানে পড়ে   সে আমাকে একদিন বললো স্যার জানেন টাকা থাকলে অনেক   সুখে থাকা যায়    আমি আর তার কথা শুনে কোন উত্তর দেয়নি   তার কথার সাথে সহমত পোষন করলাম

 

Picture : collected
 

 এখন আসি আসল কথায় ।  জীবনের উদ্দেশ্য কি ?  একটা গাড়ি, বাড়ি ,   আরাম আয়েশে ভরপুর এক জীবন।  বর্তমান প্রেক্ষাপট দেখে তো তাই মনে হয় ।  যাই হোক,  সমাজ ও রাষ্ট্রের চোখের  যারা নির্বোধ -  এই ছিল  আমার লেখার  প্রধান বিষয় ।  এখন প্রশ্ন হল এটার  মাধ্যমে আমি কি বুঝাতে চাই ?

আচ্ছা বর্তমানে সমাজ ও রাষ্ট্রে কাদেরকে নির্বোধ বলে -  যারা বিধাতার ভয় নিজেকে আবৃত রাখে পর্দার আড়ালে ,  নাকি চরিত্র বাঁচাতে উপযুক্ত বয়সে বিয়ে করতে যাওয়া ছেলেটাকে ।  যাদেরকে দেখে সমাজ   হাসিতে ফেটে পড়ে ।  তারা বলে তোদের কী মাথা খারাপ নাকি ।  যে মেয়েটি যৌবনকালে নিজেকে  আবৃত রেখেছে   পর্দায় তাকে  সবাই  বলে বেড়ায়  কিরে এত জলদি হয়ে গেলি  আন্টি । যে ছেলেটি অল্প বয়সে বিয়ে করে ফেলে  সমাজ  তাকে বলে ,  আরে আগে টাকা-পয়সা কামাও  এত জলদি বিয়ে করে করবা কি  ?

  যে যুবক-যুবতী বিধাতার  ভয়ে  হারাম থেকে নিজেকে দূরে রাখে ,   সময়মত নামাজ পড়ে ,  গান-বাজনা ও অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখে ।  সমাজ ও রাষ্ট্রে চোখে বর্তমানে তারা  নির্বোধ ও  পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ।

READ MORE : বঙ্গবন্ধুর কি পুনর্জন্ম সম্ভব ? 

  আসলেই কি দ্বারা নির্বোধ ?

 তাহলে আপনাদের কে নিয়ে যেতে চায় চৌদ্দশত বছর আগে ।

"তাদেরকে ঈমান আনতে বলা হতো। তারা বলতো, আমরাও কি ঈমান আনব "বোকাদের" মতন?" [সূরা বাকারা:১৩] 

বর্ণিত হয়েছে সূরা বাকারায়। বলেছেন স্বয়ং আল্লাহ্ রব্বুল 'আলামিন।

তারা কাকে বোকা বলতো জানেন?

আবূ বকরকে, উসমানকে। উমর, আলী, মুসআব, হামজাদের মত তারকা তুল্য মানুষগুলো ছিল তাদের চোখে বোকা।

মক্কার প্রখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মুসআব ইবনে উমাইর। সমস্ত আরব অঞ্চলে যে সকল পরিবার সম্পদ ও বিত্তের দিক থেকে শীর্ষে ছিল, মুসআবের পরিবার ছিল তাদেরই একটি। বিপুল প্রাচুর্য আর বিলাসিতার মধ্য দিয়ে তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছিল। তিনি ছিলেন ধনী বাবা-মার একমাত্র সন্তান। ভীষন আদর আর যত্নে তারা তাদের সন্তানকে বড় করছিলেন। আরব অঞ্চলের সকলের চেয়ে দামী জামা তিনি পরতেন। সে সময়কার সবচেয়ে স্টাইলিশ জুতা থাকতো তাঁর পায়ে। তখনকার যুগে ইয়ামেনী জুতা ছিল সারা বিশ্বে বিখ্যাত। আর মুসআবের পায়ে থাকত ইয়ামেনী জুতার মধ্যেও সবচেয়ে দামী জোড়াটি। মোটকথা তৎকালীন আরবে যত ধরনের দামী চমকপ্রদ পোষাক ও উৎকৃষ্ট খুশবু পাওয়া যেত সবই তিনি ব্যবহার করতেন। রাসূলুল্লাহ’র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে কোনভাবে তার প্রসঙ্গ উঠলে তিনি বলতেন, “মক্কায় মুসআবের চেয়ে সুদর্শন এবং উৎকৃষ্ট পোষাকধারী আর কেউ ছিল না।” ঐতিহাসিকেরা বলেছেনঃ “তিনি ছিলেন মক্কার সর্বোৎকৃষ্ট সুগন্ধি ব্যবহারকারি।

কিন্তু পরবর্তীতে শহরের সবচেয়ে সৌখিন যুবক মুসআব আদর আয়েশের বিলাসী জীবন ছেড়ে ছেড়া কাপড় গায়ে নিল ।

এক কথায় দুনিয়ার প্রতি তাদের কোনই আকর্ষণ নেই।

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণ জীবনযাপন করতেন। কিন্তু, একবার তাঁর স্ত্রীগণ তাঁর কাছে আবদার করেন জীবনযাত্রার মান নিয়ে। এই নিয়ে স্ত্রীদের সাথে নবিজীর মনকষাকষি হয়। নবিজী প্রায় একমাস তাঁদের থেকে আলাদা থাকেন।

নবিজীর সাথে কথা বলতে যান উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু। নবিজীকে খেজুর পাতার চাটাইয়ে শুয়ে থাকতে দেখে তিনি কান্না করেন, রোমান সম্রাট, পারস্যের সম্রাটের উদাহরণ দিয়ে বলেন তারা কিভাবে বসবাস করছে।

নবিজী জানিয়ে দিলেন, তাদের জন্য দুনিয়া, আমাদের জন্য আখিরাত। ( বই - সিরাজাম মুনিরা)

এই হল বর্তমানের সমাজ ও রাষ্ট্রের চোখে নির্বোধের সংজ্ঞা ।  যারা এই দুনিয়া বিমুখ হয়ে যায় তারাই হল বর্তমানের নির্বোধ ও বোকা ।  দুনিয়াবিমুখতা মানে এই না যে পৃথিবীর সব কর্মকাণ্ড বাদ দিয়ে শুধুমাত্র আখিরাত নিয়ে চিন্তা করা।  এর মানে হল পৃথিবীর প্রতি আকর্ষণ কমে যাওয়া এবং প্রতিটি পদক্ষেপে আখিরাতের কথা চিন্তা করে নেয়া ।

বর্তমানে   বিশ্ববিদ্যালয় পড়া অনেক বন্ধুকেই  মানুষ  নির্বোধ বলে উপহাস করে । তাদের জন্য শুধু আমি  শুধু আল্লাহতায়ালার এই কথাটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই -

-  "মনে রেখো,

আসলে তারাই বোকা, কিন্তু তারা সেটা বুঝতে পারেনা।"[ সূরা বাকারা: ১৩]

Post a Comment

0 Comments