স্ট্যাটিসটিকস অফ সিভিল অফিসারস এন্ড স্টাফ ২০২১ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের সরকারি চাকরিজীবীদের সংখ্যা ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন । যা আমাদের জনসংখ্যার খুবই নগণ্য অংশ । এই পরিসংখ্যান থেকে খুব সহজে অনুমান করা যায় দেশের অধিকাংশ মানুষই বেসরকারি চাকরিজীবী । সরকারি চাকরিকে কেন সোনার হরিণ বলা যায় তা পরিসংখ্যান দেখলে খুব সহজেই আমাদের বুঝিয়ে দেয় । সরকারি চাকরি যে শুধু একটা চাকরি সেটা বললে ভুল হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ যেন নিজেকে সমাজে অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে অন্যদের থেকে হাজার ধাপ এগিয়ে নেয়া । গ্রামের তরুণ যুবক থেকে শুরু করে শহরের শিক্ষিত মানুষ, সরকারি চাকরি সবারই মনের আশা । এখন প্রশ্ন করতে পারেন মানুষ সরকারি চাকরি কেন চায় ? কয় টাকা স্যালারি পায় ?
একজন নবম গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবীর পে স্কেল অনুযায়ী বেসিক বেতন ২২০০০ টাকা । তবে সর্বসাকুল্যে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও শিক্ষা ভাতা সহ বেতন দাঁড়াতে পারে ৩৫ থেকে ৩৭ হাজার টাকা । কমবেশি হতে পারে আনুমানিক ধরে নেই এটা ।
এখন বেনজিন তো একজন সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন, চলুন দেখি তার কি পরিমান সম্পত্তির কথা উঠে এসেছে অনুসন্ধানী রিপোর্টে । ২০২৪ সালের ৩১ শে মার্চ কালের কন্ঠ বেনজিরকে নিয়ে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে রয়েছে বেনজীর আহমেদের অঢেল সম্পদ। দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার কাছেই দামি এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমি। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে দুই লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরো ১০ বিঘা জমি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সুকৌশলী বেনজীর আহমেদ নিজের নামে কোনো সম্পদ করেননি, করেছেন তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে। গোপালগঞ্জে সাভানা ফার্ম প্রডাক্টস, সাভানা অ্যাগ্রো লিমিটেড, সাভানা ন্যাচারাল পার্ক, সাভানা ইকো রিসোর্ট, সাভানা কান্ট্রি ক্লাব বানিয়েছেন বেনজীর আহমেদ। বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড নামের একটি কম্পানিতে বড় মেয়ে ফারহিনের নামে এক লাখ, আর ছেটে মেয়ে তাহসিনের জন্য কেনা হয়েছে আরো এক লাখ শেয়ার। এম/এস একটি শিশির বিন্দু (রেজি. পি-৪৩০৩৬) নামের ফার্মের ৫ শতাংশের মালিকানায় নাম রয়েছে বড় মেয়ের। আরো ৫ শতাংশের মালিকানা রয়েছে ছোট মেয়ের। একই প্রতিষ্ঠানে বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জার রয়েছে ১৫ শতাংশ অংশীদারি। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটিতে মোট ২৫ শতাংশের মালিকানা রয়েছে বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও মেয়েদের।
রাজধানীর গুলশানে সুবিশাল অভিজাত একটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে বেনজীর আহমেদের। গুলশান ১ নম্বরের ১৩০ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাড়িটির নাম ‘র্যাংকন আইকন টাওয়ার লেক ভিউ’। ভবনের ১২ ও ১৩তম তলায় আট হাজার ৬০০ বর্গফুটের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে তাঁর। সূত্র জানায়, আট হাজার ৬০০ বর্গফুটের এই অ্যাপার্টমেন্টের বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।
তার সম্পত্তির হিসাব আরো দীর্ঘ । বেনজির যে কি পরিমাণ এর সম্পত্তি ছিল আশা করছি আর বোঝাতে হবে না । এবার বেনজির থেকে ঘুরে আসা যাক মতিউর রহমানের কাছে । ২৪ জুন , ২০২৪ সালের প্রথম আলো রিপোর্ট অনুযায়ী এখন পর্যন্ত তাঁর দুই স্ত্রী, সন্তান, ভাই–বোনসহ নিকটজনদের নামে ছয় জেলায় জমি, ফ্ল্যাট, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, রিসোর্টসহ নানা সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া গেছে। এর বাইরে পুঁজিবাজারেও তাঁর বিনিয়োগ রয়েছে।
আলোচিত এই কর্মকর্তা ও তাঁর স্বজনদের নামে থাকা এখন পর্যন্ত ৬৫ বিঘা (২ হাজার ১৪৫ শতাংশ) জমি, ৮টি ফ্ল্যাট, ২টি রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট এবং ২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পত্তি তাঁর প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে। তাঁর নামে প্রায় ২৮ বিঘা জমি ও ৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে; এর মধ্যে ঢাকার মিরপুরে একটি ভবনেই রয়েছে চারটি ফ্ল্যাট।
যাই হোক আর সম্পত্তির হিসাব দিলাম না , আমার মূল উদ্দেশ্য তাদের সম্পত্তির হিসাব দেয়া নয় . আপনাদের শুধু এতোটুকু বোঝাতে চাই যে সমাজে কেন সরকারি চাকরিজীবীদের এত কদর . সবাই জানে তাদের বেতন ৫০ হাজার টাকা হলেও তারা ২ কোটি ফ্লাটে থাকতে পারবে . স্ত্রী, সন্তান , শ্বশুর-শাশুড়িকে ফ্ল্যাট ও গাড়ি দিতে পারবে . ছুটিতেই হয়তো ঘুরে আসবে ইউরোপা আমেরিকার মতো দেশগুলোতে . হয়ে উঠবে সমাজের চোখে আদর্শ বাবা . আদর্শ জামাই , আদর্শ সন্তান . তরুণ সমাজ এদেরকে দেখলেই হয়তো অনুপ্রাণিত হয় .
আজ সমাজের দিকে তাকিয়ে দেখুন , কোন দার্শনিক নেই , কোন বিজ্ঞানী নেই, কোন চিন্তাশীল মানুষ নেই , কোন বিপ্লবী যুবক নেই . যেদিকে তাকাই শুধু দেখা যায় সরকারি চাকরির পিছে ছুটতে থাকা তরুণ সমাজ . কারণ তারাও তো দিন শেষে বেনজির এবং মতিউর রহমানই হতে চায় . তবে তাদের একটা আবদার রয়েছে তাদের নাম যেন গণমাধ্যমে না আসে . তাহলে তো সমাজে আর আদর্শ বাবা , সন্তান কিংবা জামাই হিসেবে নাম থাকবে না .
আমার স্বপ্ন ছিল এই দেশে একদিন ঘরে ঘরে আলোচনা হবে দর্শন নিয়ে , কথা হবে রাজনীতি নিয়ে . কথা হবে কবিতা নিয়ে , কথা হবে বৈজ্ঞানিক নতুন আবিষ্কার নিয়ে , আলোচনা হবে কিভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রকে সুন্দর করা যায় কিন্তু দেখুন আজ ঘরে ঘরে আলোচনা হচ্ছে বেনজির ও মতিউরকে নিয়ে .
এখনো জানতে মন চায় .
আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে .

0 Comments