মানুষ
না যন্ত্র : ঢাকার যান্ত্রিকতায় হারিয়ে যাওয়া মানুষের জীবন
ঢাকা কি আসলেই সবার শহর ? এ শহর কি জানে,
মানুষের জীবনের গল্প? এ শহরে তাদের জীবন যেন এক অনন্ত সংগ্রামের
নাম। প্রতিটি দিন যেন লড়াই করতে হয় বেচে থাকার জন্য । ঢাকার সুমহান অট্টালিকা, ঝলমলে
শপিং মল আর উজ্জ্বল আলোর মাঝে এদের জীবন যেন চাপা পড়ে যায় অন্ধকার কোণায়।
সকাল হলেই যেন নেমে পড়তে হয় জীবন যুদ্বে। ঢাকার জ্যামে বসে লড়তে হয় ঘড়ির কাটার সঙ্গে । ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ির ধোঁয়া, শব্দদূষণ
আর ধূলাবালির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা যেন প্রতিদিনের নিয়ম । আচ্ছা বলুন তো , এটা কি হতে
পারে মানুষের স্বাভাবিক জীবন ?
কাজ শেষে যখন সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পালা
, তখন বাস কিংবা মেট্রোরেলে দেখা যায় বাড়ি ফেরার প্রতিযোগিতা । ঘরে ফিরতে
ফিরতে শরীরটা এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়ে যে , পরিবারের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর ইচ্ছেটাই
মরে যায় ।
এ শহরে মানুষের জীবনে বিনোদন মানেই শুধু খাবারের
দোকান কিংবা রেস্তোরাঁয় যাওয়া। যখন সন্ধ্যা নামে তখন মানুষের যেন একটাই কাজ খাওয়া ।
কখনো কি ভেবেছেন এই শহরে শিশুরা কিভাবে
বড় হয় ? শিশুদের জন্য নেই খেলাধুলার কোনো সুব্যবস্থা। খেলার মাঠ বলতে শুধু চার দেয়ালের
ভেতরে মোবাইল স্ক্রিনের গেইম। এমন পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুরা কি স্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব
গড়ে তুলতে পারবে?
মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীদের জন্য এই শহর
যেন আরও কঠিন। তারা ঘরের কাজের পাশাপাশি বাইরের কাজও সামলায়। কিন্তু তাদের এই শ্রমের
মূল্যায়ন বলতে গেলে প্রায় নেই। নারীদের জন্য
আমরা কি দিতে পেরেছি , নিরাপদ চলাচলের নিশ্চয়তা।
ঢাকার মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবন যেন টাকার কাছে হার মানতে হয়। পকেটে টাকা নেই? তাহলে যেন এই শহর বলে দেয়—তোমার ভালো থাকার অধিকার নেই।
বিনোদন থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা থেকে
দৈনন্দিন প্রয়োজন, সবকিছুতেই মধ্যবিত্তদের হতে হয় বৈষম্যের শিকার । কারন শুধু একটাই টাকা ।
জীবন মানেই তো শুধু বেঁচে থাকা নয়, বেঁচে থাকার মানেই হলো কতনা সুন্দর স্মৃতির সংমিশ্রন
। কিন্তু এই শহরে তা যেন এক বিলাসিতা।
এই শহরের নামি-দামি এলাকা যেন সম্পূর্ণ
ভিন্ন একটি পৃথিবী। এখানে যারা বাস করে, তাদের জীবন মানে সুযোগ-সুবিধার অভাবহীন এক
স্বর্গ। অন্যদিকে, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জীবন সম্পূর্ণ বিপরীত। তাদের প্রতিদিনের ছোট
ছোট চাহিদা পূরণের জন্যও করতে হয় সংগ্রাম ।
আমরা যদি সত্যিকারের উন্নত নগরী গড়তে চাই,
তবে সব শ্রেনীর মানুষের জন্য বসবাসযোগ্য পরিবেশ
তৈরি করতে হবে। তাদের জন্য মানসম্মত বিনোদন, শিক্ষার সুযোগ এবং স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা
নিশ্চিত করতে হবে।
.webp)
0 Comments