REPORTING FACTS , NOT FICTION

6/recent/ticker-posts

যে একই ভুল পুনরাবৃত্তি করছে মুসলমান - দেখে নেই ইতিহাসের আলোকে

 ইউরোপের চাকচিক্যময় রঙিন সমাজ দেখে আমাদের যুবক যুবতীদের একমাত্র স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের মত জীবন যাপন করা । যেন জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় তাদের দেখানো পথেই । বড় বড় অট্টালিকা , দামি গাড়ি, বিলাসবহুল বাড়ি যেন তাদের চোখে সফলতার একমাত্র মাপকাঠি । আর সমাজে আমাদের শিক্ষিত যুবক যুবতীদের একমাত্র উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়েছে দেশের গণ্ডি থেকে বের হয়ে বিদেশে সেটেল হওয়া । ইউরোপের শেখানো প্রতিটি কাজকে যেন আমরা ধরে নিয়েছে আদর্শের মাপকাঠি ।

যার ফলশ্রুতিতে সমাজ থেকে যেন হায়া একেবারে উঠে গিয়েছে । আজ মুসলিম যুবকদের আদর্শ খালিদ বিন ওয়ালিদ না হয়ে হয়েছে পশ্চিমাদের নায়ক নায়িকা । এখন আর মেয়েরা ফাতিমার মতো হতে চায় না , তারা সাফল্য খুঁজে পায় নিজের শরীরকে বিক্রি করে ফ্যান ফলোয়ার অর্জন করতে । এখন আর প্রিয় নবীর ওফাতের ইতিহাস শুনলে আমাদের কান্না পায় না , আমাদের অশ্রু গড়িয়ে পড়ে হলিউডের কোন নায়ক মারা গেলে । মুসলিমদের গৌরবময় ইতিহাস এখন আর তাদের কাছে কোন গুরুত্ব বহন করে না । এগুলো শুধু তাদের কাছে রূপক গল্পই মনে হয় । এজন্যই সূরা আল ইমরানের ১৯৬ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ আমাদের সতর্ক করেছিল কাফিরদের চালচলন যেন তোমাকে ধোঁকা না দেয় । কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো আমাদের শুধু ধোঁকা দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি , সেটাকে আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছি আমরা সমাজে ।


picture : collected 


এ ভুল যে আমরা এখন করছি ঠিক তেমন না । সে ইতিহাস জানতে হলে আমাদের বিচরণ করতে হবে প্রাক নবুওয়াতি যুগে। তখনকার আমালেক সভ্যতা ছিল তৎকালীন যুগে সারা বিশ্বে ক্ষমতা ও প্রতিপত্তিতে সবার শীর্ষে । সে সভ্যতাতে গিয়েছিল আমর বিন লুহাই । সে ছিল খুযা'আ গোত্রের প্রভাবশালী নেতা ও বীর যোদ্ধা । সে যখন মক্কা থেকে সিরিয়ায় ভ্রমণ করে , তখন তার সাথে পরিচয় হয় আমালেক সভ্যতার মানুষদের সাথে । আমলেক সভ্যতা তখন মূর্তি পূজা করত । যখন আমর বিন লুহাই , তারা কেন মূর্তিপূজা করছেন সে সম্পর্কে জানতে চায় - তখন তারা বলে এ মূর্তিগুলোই নাকি তাদের সব শক্তির উৎস । যেকোনো প্রতিকূল অবস্থা যেমন খরা কিংবা দুর্ভিক্ষ এমনকি শত্রুর আক্রমণের শিকার হলেও তারা এ মূর্তিগুলোর কাছেই সব সমাধান প্রার্থনা করতো এবং তারা নাকি অলৌকিকভাবে সাহায্য পেয়ে যেত মূর্তি পূজা করার কারণে । একথা শুনে আমর বিন লুহাই তাদের কাছে একটা মূর্তি চায় । তারা হুবাল নামে একটি মূর্তি তাকে উপহার দেয় । আর এভাবে আরব দেশে প্রবেশ করে মূর্তি । এই হুবাল ছিল কুরাইশদের প্রথম এবং প্রধান মূর্তি ।


আজ ঠিক 2500 বছর পর আমরা একই ভুল করে যাচ্ছি । ইউরোপ সমাজের জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নতি দেখে আমরা ভেবে নিচ্ছি তাদের সমাজ ব্যবস্থাই হল সব সমস্যার সমাধান করে দেবে । তাদের প্রতিটা কথা আমাদের যেন অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে ।

আমরা যদি খেয়াল করি আমর বিন লুহাই ছিল সেই সমাজের প্রভাবশালী নেতা । ফলে সে যখন মূর্তিপূজার আদেশ দিল তখন তারা কোন দ্বিধা ছাড়াই মেনে নিল ।

এখন যদি আমরা মাথা ঠান্ডা করে আমাদের সমাজের দিকে তাকাই । একই দৃশ্য কিন্তু আমাদের চোখে ভেসে উঠবে । সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে আমরা পেয়েছি অনেক পরিচিত মুখ । যাদের রয়েছে লাখ লাখ ফলোয়ার । যুবক যুবতী তাদের কথা ওহির মত বিশ্বাস করে । যেহেতু তারা গান বাজনা নিয়ে মগ্ন , ছেলে মেয়ের অবাধ মেলামেশা , লিভ টুগেদার , মানুষের অধিকারের নাম দিয়ে সমকামিতাকে সমর্থন , মানবাধিকারের নাম দিয়ে আমার আমার শরীর আমার ইচ্ছা বাস্তবায়ন, সবকিছু তারা যুবক যুবতীদের মগজে প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছে ।

মনের অজান্তে প্রশ্ন জাগতে পারে এমন হচ্ছে কেন ? এর সরাসরি উত্তর হল inferiority complex এবং মুসলিম আইডেন্টিটি ক্রাইসিস । আমরা আমাদের পরিচয় এবং ইতিহাসকে ভুলে গিয়েছি । আমরা ভুলে গিয়েছি নবি-রাসুলদের দেখানো পথকে । আমরা ভুলে গিয়েছি শত বাধা বিপত্তিতেও কীভাবে আঁকড়ে ধরতে হয় কোরানের দেখানো আদর্শকে । আগের নবী-রাসূল সাহাবিরা সবসময় ভাবতো আমরা কীভাবে আল্লাহকে খুশি করতে পারি । এখন আমাদের মানসিক অবস্থা দাঁড়িয়েছে আল্লাহ কীভাবে আমাদের খুশি করতে পারে ।

যতই আমাদের কুরআন ও নবি রাসুলদের দেখানো পথ থেকে বিচ্যুতি খাটবে , ততই আমাদের অধঃপতন নিশ্চিত । যার জ্বলন্ত উদাহরণ ওহুদের যুদ্ধ। যখন কিছু সংখ্যক মুসলমান আল্লাহর রাসুলের প্রকাশ্য একটি নির্দেশকে ভুলে যায় এতে মুসলিম সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে । প্রিয় নবীর মতে ওহুদের যুদ্ধে মুসলমানরা যতটুকু বিপর্যয় দেখেছে তা হয়েছে শিক্ষা নেওয়ার জন্যই ।

এভাবেই জীবনের প্রতিটি স্তরে যখনি আমরা কোরানের দেখানো আদর্শকে ভুলে যাব , ভুলে যাবো নবি-রাসুলদের দেখানো পথকে তখনই মাথায় রাখতে হবে আমাদের অধঃপতন নিশ্চিত সেটা আজ হোক কিংবা কাল কিংবা ১০০ বছর পর ।



Post a Comment

0 Comments